বঙ্গ নিউস, ২৯ সেপ্টেম্বরঃ উৎসব হোক বা মহামারী তাদের জীবনে ছুটি নেই। অবসর নেই, রোদ জল বৃষ্টি মাথায় করে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তাঁরা। সোনার ফসল ফলিয়ে মানুষের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন তুলে দেন এই মানুষগুলো। কিন্তু তার বিনিময়ে নেই কোন সম্মান। এমনকি ন্যায্য পারিশ্রমিকটুকুও জোটে না দিনের শেষে এই দেশের কৃষকদের।
এতদিন এই ছবিটাই ছিল নর্মাল। কিন্তু নিউ নর্মালে এই চির পরিচিত ছবি বদলে গেল। মাটির মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন আরেক মাটির মানুষ বলাগড়ের বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা পশ্চিমবঙ্গ হ্যান্ডবলের রাজ্য সভাপতি জনদরদী শ্রী কুন্তল ঘোষ মহাশয়।
আরও পড়ুন গাড়ির লাইসেন্স সহ দরকারি নথি এবার দেখা যাবে অ্যাপ থেকেই
কেন্দ্র সরকারের কৃষি বিলের বিরুদ্ধে দিকে দিকে প্রতিবাদ সভা অবরোধ বিক্ষোভ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। কুন্তল ঘোষ বলেন, এই কৃষি বিল কার্যকর হলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা। তাই কৃষকদের মনোবল বৃদ্ধি করতে কুন্তল ঘোষের উদ্যোগে নিউ ভারতী সংঘের পরিচালনায় সম্বর্ধনা দেওয়া হল কৃষকদের।
শ্রী কুন্তল ঘোষ মহাশয়ের কাছে থেকে এই সম্মান পেয়ে আনন্দে আত্মহারা কৃষকদের চোখে আনন্দাশ্রু। শুধু সম্বর্ধনা দেওয়া নয়, ধুলো মাখা পা দুটোতে সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করেছেন বিশিষ্ট সমাজসেবী। কৃষকরাও দু হাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন৷ বুকে জড়িয়ে ধরেছেন তাদের ঘরের ছেলেকে৷
এর আগেও বিভিন্ন সামাজিক কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন মানবদরদী কুন্তল ঘোষ। কিন্তু তার এইবারের উদ্যোগ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। অন্ন বস্ত্র বাসস্থান প্রত্যেকটি মানুষের মৌলিক চাহিদা। সেই অন্ন জোগায় যারা যাদের এই সমাজে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা তাদেরকেই চিরকাল পিছনে ফেলে রাখা হয়েছে। করোনা মহামারীতে সেই মানুষগুলোর প্রতিনিয়ত যুদ্ধের কথা কি আমরা ভেবেছি কখনো?
কিন্তু আমাদের ভাবিয়েছেন কুন্তল ঘোষ মহাশয়৷ তিনি জানিয়েছেন, মার্চ মাস থেকে চলছে লকডাউন। এই দীর্ঘ লকডাউনে আমরা কাছের মানুষদের কাছে যাচ্ছি না। সেখানে কৃষকরা প্রতিদিন ঘরের বাইরে বেরিয়ে ফসল ফলিয়েছেন আমাদের জন্য। ডাক্তার পুলিশ এদের পাশাপাশি কৃষকরাও যে কোভিড যোদ্ধা সে কথা উল্লেখ করেন কুন্তল ঘোষ। কারণ অন্ন ছাড়া মানুষের প্রাণ ধারণ করা অসম্ভব। এই মহামারীকে উপেক্ষা করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পরিশ্রম করেও সঠিক দামে আমাদের কাছে অন্ন সংস্থান করেছেন কৃষকরা৷ তাই এই সম্মান তাঁদের প্রাপ্য৷
আরও পড়ুন আমেরিকার চেয়ে ভারতকে অধিক কর দিয়েছেন ট্রাম্প: রিপোর্ট
কৃষক বিলের প্রতিবাদ করে কুন্তল ঘোষ বলেন এই বিল কৃষকদের চরম ক্ষতি করবে। লাভবান হবেন কেবলমাত্র কোটিপতি শিল্পপতিরা। কেন্দ্র সরকারের কৃষি বিলের প্রতিবাদ করায় পশ্চিমবঙ্গ এর ৮ জন এমপি কে বহিষ্কার করা হয়েছে। মাটির মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্য মা মাটি মানুষের সরকারের এই প্রতিবাদ৷ এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই কেন্দ্র সরকারের অমানবিকতার প্রতিবাদেই কুন্তল ঘোষ কৃষকদের একজোট করতে চেয়েছেন এবং তাঁদের প্রাপ্য সম্মান দিতে চেয়েছেন৷ পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুর, তারকেশ্বর, বলাগড়, গুপ্তিপাড়া, কুন্তীঘাট, ধনেখালি, এই সমস্ত জায়গায় প্রায় ৭০০ কৃষককে তিনি সম্বর্ধনা দিয়েছেন। কুন্তল ঘোষের কথায়, মাটি আমাদের মা। সেই মাটির রক্ষক যারা, তাঁরা হলেন কৃষক। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের কথা ভাবেন।
এক কৃষক বন্ধু বলেন, তাঁরা সকলেই দেবতার পুজো করেন। কিন্তু দেবতার দর্শন কখনো পাননি। আজ কুন্তল ঘোষের মধ্যে তাঁরা তাঁদের সেই না দেবতাকে খুঁজে পেয়েছেন। অনেকেই অনেক কথা বলেন, কিন্তু কাজে কিছুই করেন না। ৪৮ বছর বয়সী এক কৃষক বন্ধুর কথায়, তাঁর ৩৬ বছরের কৃষিজীবনে এই প্রথম তিনি দেখলেন কৃষকদেরকে কেউ সম্মান জ্ঞাপন করছেন৷
হুগলির কৃষকদের কাছে কুন্তল ঘোষ দূরের কোনো তারা নন, কাছের মানুষ, কেউ ভাই, কেউ ছেলে, কেউ দাদা বলেই জানে তাঁকে। বিপদে আনন্দে যাকে সবসময় তাঁরা পাশে পেয়েছেন পরিবারের একজনের মতই৷ বাংলা তথা ভারতে এই প্রথম কৃষকদের মনোবল বাড়াতে নজিরবিহীন কাজ করলেন কুন্তল ঘোষ৷ এই মহান কর্মযজ্ঞে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকদের মনোবল বৃদ্ধি তথা তাঁদের একজোট করা থেকে কৃষিবিলের প্রতিবাদ স্বরূপ কোভিড যোদ্ধা রূপে স্বীকৃতি দিয়ে কৃষকদের এই সম্বর্ধনাজ্ঞাপন যে আক্ষরিক অর্থেই বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।