Home কলকাতা নন এসি মেট্রোরেলের যবনিকা পতন

নন এসি মেট্রোরেলের যবনিকা পতন

by banganews

রবিবার শেষবারের মত নন এসি মেট্রো চলল কলকাতা মেট্রোরেলের ইতিহাসে। দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক ধরে যাত্রী ভার বয়ে নিয়ে চলেছিল এই নন এসি রেকগুলি। বিভিন্ন সময়ে অত্যধিক ভিড়, যান্ত্রিক গোলযোগ, লেট হওয়া – এসব কিছুরই সাক্ষী থেকেছে সে।

৩৭ বছর আগে কলকাতার প্রথম মেট্রো ছেড়েছিল এসপ্লানেড থেকে। কর্ণাটকের নিউ গভর্নমেন্ট ইলেকট্রিক ফ্যাক্টরি (এনজিইএফ) সংস্থার সহযোগিতায় নির্মিত যে রেক প্রথম দিন ছুটেছিল, সেই একই সংস্থার তৈরি নন এসি রেক ছুটল শেষ দিনেও।

নন এসি মেট্রো, তার বাইরের চেহারা ছিল হয়তো সাদামাটা, খুব কিছু ঝাঁ চকচকে নয়। কিন্তু অল্প রক্ষণাবেক্ষণেই প্রস্তুত থাকত এ স্টেশন থেকে ও স্টেশন ছোটার জন্য।

রবিবার দিন মেট্রোর জন্মদিনে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। নন এসি কামরাতে হয় সেই প্রদর্শনী। সেখানে মেট্রোর ইতিহাস, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে মেলে ধরা হয়। সেই প্রদর্শনী থেকেই অনেক অজানা ইতিহাস মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে জানতে পারা যায়। অনেক নতুন তথ্য।

আরো পড়ুন

সেরা বিজ্ঞানীর নামের তালিকায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

যেমন – ১৯৮৬ সালের ২৮ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু মেট্রোয় সফর করেন। তাছাড়া সত্যজিত রায় তিনিও সিনেমা তৈরির ভাবনা নিয়ে মেট্রো পথ ঘুরে দেখেন। এই প্রদর্শনী তুলে ধরেছে এরকম অনেক স্মৃতি যার সাথে কলকাতা মেট্রো অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ছিল। শুধু তাই নয়, কেন মেট্রোরেলের দরকার পড়ল, কীভাবে তার পথ লা শুরু হল তাও ধরা পড়েছে এই স্মৃতির প্রদর্শনীতে।

ব্রিটিশ আমলের পর থেকে কলকাতা শহরের অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দরকার পড়ে শহরের উন্নয়নেরও। শহরে তখন কম রাস্তাঘাট। নিত্যযাত্রীদের সমস্যা লাঘবের জন্য শুরু হয় এমন ভাবনা। এমন একটা যাতায়াত মাধ্যমের প্রয়োজন হয় যাতে দ্রুত স্বল্প সময়ে কাজের জায়গায় মানুষ পৌঁছাতে পারে। আর তখনই এমন পরিকল্পনার জন্ম। স্বাধীনতা ভারতে প্রথম মাটির তলা দিয়ে রেল চালানোর ভাবনা। এই ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য সাহায্য চাওয়া হয় জার্মানি, হাঙ্গেরি এবং রাশিয়ার কাছে। তাদের সহায়তায় ট্রেন চালানোর জন্য কলকাতার মাটিতে খনন শুরু হয়।

শুধু এই রেলের জন্য চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিতে বিশেষ কামরা তৈরি করে দুই ভারতীয় সংস্থা। অবশেষে ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর ভবানীপুর থেকে (এখন নেতাজী ভবন) এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে শুরু হয় মেট্রো। তবে তখন একটি ট্রেনে কোচের সংখ্যা ছিল চার। এখন যা আট হয়েছে।

২০১০-র ৭ অক্টোবর মেট্রোয় প্রথম আসে এসি কামরা। তখন সংখ্যাটা ছিল মাত্র দুই। তার পর ধীরে ধীরে সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে এখন সব মেট্রোই এসি। মেট্রোরেলের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আর নন এসি মেট্রো চলবে না।

এ দিন রেকগুলি সাজিয়ে দিয়েছিলেন রেলপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা। মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশন ছেড়ে নোয়াপাড়া ইয়ার্ড পর্যন্ত শেষ দৌড়কে সবুজ পতাকা দেখান মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার মনোজ জোশী-সহ অন্য আধিকারিকেরা। রেলপ্রেমী, সংবাদমাধ্যমের কর্মী, যাত্রীদের শেষবারের মত এই স্মৃতিকে ধরে রাখবার চেষ্টা মন খারাপ করে দেয় কলকাতাবাসীকে।

কোনো নতুন কে সামনে আনতে গেলে কোনো পুরনোকে বিদায় নিতেই হয়। এমনটাই হল এক্ষেত্রেও। মেট্রোরেলের ইতিহাসে সগর্বে চলে আসা নন এসি মেট্রো বিদায় নিল এবার। কলকাতা শহরের নামের সাথে জুড়ে থাকা এরা আজ শেষবারের মত নিজের এতদিনের পথ চলাও শেষ করল।

You may also like

Leave a Reply!