চীনের রাষ্ট্রপতি সি জিংপিং-এর জাপান সফরের সময় নির্ধারিত হয় এই বছরের এপ্রিলে, কিন্তু করোনা ভাইরাসের বিশ্বব্যাপি অতিমারী এই সফরকে পিছিয়ে দেয় অনির্দিষ্টকালের জন্য। ২০০৮ সালের পরে জাপানে এই প্রথম চীনের রাষ্ট্রনায়কের প্রবেশের প্রস্তাব উঠেছিল। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিঞ্জো আবের, ক্ষমতাসীন লিবেরাল ডেমোক্রেটিক পার্টির বিরুদ্ধে ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যর্থতার দরুন টোকিওতে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। বেশ কিছুদিন ধরেই জাপান ও চীনের মধ্যে বৈদেশিক সম্পর্কের টালমাটাল অবস্থা চলছিল। এশিয়ার দুই উদীয়মান দেশের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব ও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি বিস্তারের এই লড়াই স্বাভাবিক।
হংকং শহরে জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের দরুন সেই শহরের স্বায়ত্তশাসনের ওপর চীনের হস্তক্ষেপ নিয়ে কড়া ভাষায় নিন্দা করেছে জাপান সরকার। তাদের আশঙ্কা, ন্যাশানাল সিকিউরিটি ল্য’র প্রয়োগিক দিক আদতে সেই বানিজ্যকেন্দ্রে জাপানি কোম্পানিগুলোর প্রভাব ও মুনাফা নষ্ট করবে। এছাড়াও জাপান, চীনের আগ্রাসন ও সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। হংকং-র মতো একটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক হাবকে তারা অগণতান্ত্রিক উপায়ে কুক্ষিগত করতে চাইছে। সেখানে ১,৪০০ খানা জাপানি কোম্পানি আছে, যারা বিশ্বের বৃহত্তম জাপানি কৃষিজ পণ্যের ক্রেতা। এই রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে জাপানের জন্য তা বিরাট অংকের আর্থিক ক্ষতি। তারা জানায় যে ৫০ বছর ব্রিটিশ কলোনি থাকার পরে ১৯৯৭ সালে যখন এই অংশটি চীনকে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তখন তা স্বাক্ষরিত হয় কেবল এই শহরের গণতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসনের বিনিময়ে।
জাপানের বিদেশমন্ত্রী তোশিমিৎসু মোটেগি একটি চিঠিতে চীনকে সেখানে বসবাসকারী জাপানি মানুষের স্বার্থ লঙ্ঘিত যাতে না হয়, সেদিকে নজর দিতে বলেন। পূর্ব চীন সাগরের সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জে,ও দিয়াওয়ু দ্বীপে লালফৌজের নৌতৎপরতা হ্রাসের দাবি জানায় জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি য়োশিহিডে সুবা, নচেৎ এই সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে যাবে আমেরিকাও কারণ একটি দ্বিপাক্ষিক সামরিক চুক্তি মারফত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংকটে জাপানকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীনের নৌবহর যেভাবে জাপানি জলসীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করছে তা নিয়ে অস্বস্তিতে জাপান, সেখানকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী টারো কোনো জানিয়েছেন যে সামরিক শক্তি অপসারণের আগে চীনের রাষ্ট্রপতি এদেশে স্বাগত নন, যেহেতু প্রতিরক্ষামন্ত্রকই বিদেশী অতিথির সুরক্ষার দায়িত্ব নেয় সেক্ষেত্রে তিনি নিজের কণ্ঠস্বরকে সরকারি অধিবেশনে তুলে ধরবেন। এর ফলে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাতিল করে দিতে পারেন চীনের রাষ্ট্রপতি সি জিংপিং-র সফর। পাশাপাশি জাপান গালওয়ান উপত্যকায় চৈনিক অনুপ্রবেশেরও কড়া নিন্দা করেছে।