Home কলকাতা ‘করোনা ঠেকানো’র ওষুধ আর্সেনিকামের জন্য হাতাহাতি দোকান বন্ধ করার হুমকি পুলিশের

‘করোনা ঠেকানো’র ওষুধ আর্সেনিকামের জন্য হাতাহাতি দোকান বন্ধ করার হুমকি পুলিশের

by banganews

আর্সেনিকামের জন্য হাতাহাতি দোকান বন্ধ করার হুমকি পুলিশের লিখলেন মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

হইচই শুনে ছুটে এল পুলিশ। হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকানের সামনে ততক্ষণে হাতাহাতি হওয়ার জোগাড়। একজন সাতটা শিশি পেলে আরেকজন কেন পাবেন না! স্টক যে শেষ, বলে বোঝানো যাচ্ছে না কাউকে। পুলিশের হুমকি—পরিস্থিতি না সামলালে শাটার টেনে দেওয়া হবে।

কলকাতার নামীদামি হোমিও ওষুধের বিপণীর সামনে কমবেশি এই হাল। সমস্যার নাম আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০। ‘করোনা ঠেকানো’র ওষুধ নামে ফিরছে লোকের মুখে মুখে। জার্মান প্যাকেটের চাহিদা আবার সবচেয়ে বেশি। ভারতীয় প্যাকেটে দিকে বিশেষ কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেন না।

কলকাতার যখন এই অবস্থা, জানা গেল, মহারাষ্ট্র সরকার কোভিড-ভয়ে ভীত সাধারণ নাগরিকের জন্য এই ওষুধটি খাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে বাড়ছে চাহিদা। চাহিদা তুঙ্গে চণ্ডীগড়েও।

ঘটনা হল, গত বুধবার কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক ঘোষণা করেছে, ভারতের ৬টি শহরে তারা পরীক্ষামূলকভাবে এই ওষুধটির কার্যকারিতা লক্ষ করবে। শহরগুলি হল—দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, সুরাট, হায়দ্রাবাদ এবং মছলিপট্টনম। আয়ুষ মন্ত্রকের এই ঘোষণার পর সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি-র তরফ থেকে পর্যবেক্ষণের জন্য এই ওষুধটির ব্যবহারে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

সমস্যা এর পরই। এখনও অবধি আর্সেনিক অ্যালবাম ওষুধটির সরাসরি করোনার ওপর প্রভাব পরীক্ষিত হয়নি। শ্বাসকষ্ট কমাতে এর কার্যকারিতা জানা আছে। আর বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। হোমিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাধারণের মধ্যে যে হারে ‘করোনার ওষুধ’ ধারণাটা ছড়িয়ে পড়েছে, এর ফলে এর অবৈজ্ঞানিক ব্যবহার লাগামছাড়াভাবে বেড়ে যাবে। ভয়টা সেখানেই।

আরো পড়ুন – করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভারচুয়াল বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর ১৬ এবং ১৭ জুন সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে

ভয় কেন?
এই ওষুধটি খাওয়ার এক নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০ খালি পেটে এক ডোজ করে তিন দিন খেতে হবে। একমাস পর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রকোপ থাকলে একই ডোজ অর্থাৎ আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০ খালি পেটে এক ডোজ করে তিন দিন আবার খেতে হবে ।

সুতরাং আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০ এক ডোজ করে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। লাগাতার ব্যবহার নয়। আবার সিল করা শিশি থেকে সরাসরি খেলেও কোনও ফল মিলবে না। কারণ ডোজটা তৈরিই হল না। গ্লোবিউলস/ট্যাবলেট/সুগার অফ মিল্ক/কোনস/পিউরিফায়েড ওয়াটার ইত্যাদিই হল এই ওষুধের মাধ্যম। এগুলোই ডোজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর বাইরে সরাসরি কোনওভাবেই এটি ব্যবহারের উপযোগী হয় না।

আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০ সরাসরি করোনা প্রতিরোধ করে না। এই ওষুধটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার বা তীব্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কমে।

আরো পড়ুন – বাংলার ইচ্ছাশক্তিকে কুর্নিশ জানালেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ুন তাঁর টুইট

তবে দীর্ঘদিন ধরে এই ওষুধ ব্যবহার করলে শরীরে কিন্তু আর্সেনিকের লক্ষণ ফুটে ওঠে। দেখা দেয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
শুধু তাই নয়, নিত্য ব্যবহৃত কোনও ওষুধের সঙ্গে এই ওষুধটির বিরোধ থাকলে তখন আবার শরীরে উল্টো উৎপত্তি। ওষুধের প্রভাব নষ্ট করার জন্য অ্যান্টিডোট দেওয়া ছাড়া গতি নেই।

তাই সবচেয়ে নিরাপদ হল, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে এই ওষুধটি খাওয়া। কিন্তু শুনছে কে! আর্সেনিকাম অ্যালবাম বিকোচ্ছে হু হু করে। তার চেয়ে ঢের বেশি গতিতে বাড়ছে করোনা-ও।

You may also like

Leave a Reply!