Home ফিচার বঙ্গ জীবনে বাংলা ক্যালেন্ডার পায় কেবল একটা দিনের আদর

বঙ্গ জীবনে বাংলা ক্যালেন্ডার পায় কেবল একটা দিনের আদর

by banganews

সন্ধ্যেবেলা পাড়ার দোকানে হালখাতার আমন্ত্রণ। মিষ্টির প্যাকেট আর সঙ্গে একখানা বাংলা ক্যালেন্ডার। সময়ের চাকা ঘুরলেও, বদল হয়নি এই রীতির কিংবা রেওয়াজের। যদিও বাঙালির নিজস্ব ক্যালেন্ডার চর্চাও আর নেই। বিয়ে-পৈতে-অন্নপ্রাশনের মতো অনুষ্ঠান এবং স্বল্প কিছু ব্যবসা-বাণিজ্যিক ক্ষেত্র ছাড়া বাংলা তারিখের প্রয়োজন আজ ফুরিয়েছে। সে দিন গিয়েছে তবু, অন্দরে না হোক নববর্ষের সন্ধ্যেয় মিষ্টির প্যাকেটের সঙ্গে পাওয়া একখানি বাংলা ক্যালেন্ডারের স্মৃতি এখনও অমলিন বাঙালির অন্তরে।

এক দশক আগেও ব্রতচারী বাঙালির লাগতো সম্পূর্ণ নিজের মতো একটা দিনলিপি। বাঙালির ঘরে ঘরে তাই অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল বাংলা ক্যালেন্ডার। এর পর সময়ের হাত ধরে বাংলা ক্যালেন্ডারে আসে হরেক রকম রূপ। আসে বাংলার ছয় ঋতু। প্রত্যেক ঋতুর জন্য ধার্য হল দু’টো করে মাস। আবার প্রত্যেক মাস নামাঙ্কিত হল একেকটি নক্ষত্রের নামে। যেমন বিশাখা নক্ষত্রের নামে হল বৈশাখ, জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নামে হল জ্যৈষ্ঠ, উত্তরআষাঢ় নক্ষত্র থেকে এলো আষাঢ়, শ্রবণা থেকে এলো শ্রাবণ ইত্যাদি। পাশাপাশি নবগ্রহ থেকে সাতজনকে বাছাই করে নেওয়া হল সাতটি দিনের জন্য। সব মিলিয়ে ফসল ফলানোর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ঋতু মাসের হিসেব ধার্য করা হল। স্বদেশি যুগে দেশি নেতাদের ও মনিষীদের নাম আর জন্মদিন দেওয়ার প্রথা চালু হল। কলের ছাপা খানায় রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, নজরুল, রামকৃষ্ণ, স্বামীজির নাম ও ছবি যুক্ত হতে থাকে। রাহু-কেতু- গ্রহণ নির্ভর ক্যালেন্ডারে বাঙালি যুক্ত করল তাদের স্বদেশ নেতাদের প্রতি প্রণাম। পঞ্জিকার অফিস থেকেই প্রকাশ পেত এমন তারিখ যুক্ত ক্যালেন্ডার। এরসঙ্গে বারো মাসে তেরো পার্বণের নানা হিসেব। তার পর যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আসে রঙিন ছবি। হালখাতার দোকানদার নিজের নাম দিয়ে ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে থাকে। সেই চল আজও চলছে।

দিন বদলালেও, এই একটা দিনে বাঙালি কিন্তু থাকে তার জাত্যাভিমানে। তাই, শহর থেকে শহরতলি, গ্রাম-গ্রামাঞ্চলে নতুন বছরকে বরণের দিনে বাঙালির ঘরে ঢুকে পড়ে অন্তত একখানা বাংলা ক্যালেন্ডার। তবেই যেন বৈশাখের পয়লা তার পূর্ণতা পায়।

You may also like

Leave a Reply!