আপনি রবীন্দ্রনাথের গান করেন, কিন্তু দেশাত্মবোধক গান করার সময় বিশেষ কোনো প্রিপারেশন লাগে কী?
না তেমন কোনো বিশেষ প্রিপারেশন এর কথা বলতে পারব না৷ যেকোনো গান আমার কাছে পুজো করার মত। দেশাত্মবোধক গান করার সময় আলাদা একটা ইমোশন কাজ করে৷ যখন সামনে মাইক্রোফোন থাকে, কানে হেডফোন থাকে একটা অন্যরকম ইমোশন কাজ করে৷
রবীন্দ্রনাথ এর কবিতা “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ” যা প্রায় সকল বাঙালি একবার না একবার আবৃত্তি করে থাকে সেইরকম একটা বিখ্যাত কবিতাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট৷ গানের রূপান্তর এটা কেন? কাজটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
কাজটা মূলত করেছেন অগ্নিভ। উনি জার্মানিতে থাকেন উনি একজন ডাক্তার। উনি আমাদের প্রোডাকশন হাউজের কাজকর্ম সমস্ত কিছু দেখেছেন এবং হি ওয়াজ ভেরি কিন টু ইউ নো রিলিজ দ্য সং ফ্রম আওয়ার প্রোডাকশান হাউস৷ সেইজন্য উনি বললেন, ওঁর কাছে গানটা তখন রেডি ছিল৷ এর আগেও উনি বেশ কিছু কাজ করেছেন আমি সেগুলো দেখেছিলাম। আমাকে গানটা যখন পাঠালেন, আমার খুবই পছন্দের কবিতা নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ আর যখন পাঠালেন কম্পোজিশনটা, আমার খুব রেলিভেন্ট লেগেছিল উইথ দ্য লিরিক্স। সেই কারণে কাজটা করতে রাজি হই৷ কাজটা করে আমি খুব স্যাটিসফায়েড৷ আমার খুবই ভালো লেগেছে৷
ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় এর উদ্যোগে বিদায় বেলায় ভৈরবী অনুষ্ঠানের প্রচার করেছেন৷ দেহোপজীবিনীর সন্তানদের জন্য এই উদ্যোগ৷ এখনো তো সমাজে তারা প্রান্তিক কিছুটা বাঁকা চোখে দেখে সমাজ৷ কী বলবেন?
এগিয়ে এসেছেন বরাবর বহু মানুষ। আজকে তুমি আমারটা দেখছ, দুদিন পর অন্য কাউকে দেখতে পাবে৷ বা অনেকেরটা দেখা যাচ্ছে না। আবার বেশিরভাগ মানুষ এদেরকে সত্যিই নীচু চোখে দেখেন৷ এটা সমাজের একটা স্টিগমা, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই যে দেহব্যবসার কাজকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা, এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা খুবই অন্যায় কাজ করছেন এই যে স্টিগমা সমাজে দেখে আসছি, এগুলো খুব তাড়াতাড়ি কাটবে বলে আমার মনে হয় না। কেউ যদি সোসাইটিতে নিজের পরিচয় দেয়, ইউ নো প্রসটিটিউট কথাটাতেই আমার আপত্তি রয়েছে প্রথমত, কিন্তু কেউ তো এই পেশার কথা সর্বসমক্ষে বলতে পারবে না, সেটা খুবই আনফরচুনেট এবং এই অবস্থা থেকে আদৌ সমাজ কখনো বেরোতে পারবে কি না জানি না। কিন্তু এটা করেই এঁদের পেট চলে। তবে ঋদ্ধি দি যে উদ্যোগটা নিয়েছেন সেটা খুবই সাধু উদ্যোগ। আমি জানার সঙ্গে সঙ্গেই বলেছি আমি থাকব৷ এবং আগামীতে আমি নিজেও এই ধরনের উদ্যোগ নিতে আগ্রহী৷
করোনা মহামারীর সময় বাড়িয়ে দাও তোমার হাত এ ডোনেট করেছেন৷ ব্যক্তিগত উদ্যোগে জায়গায় জায়গায় গিয়ে ত্রাণ দিয়েছেন৷ এই যে তথাকথিত সেলেব্রিটি তকমা মুছে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, এটা কি সেলিব্রিটি হওয়ার কারণে সুবিধা হয় না অসুবিধা?
advantage সেই অর্থে, শিল্পীদের যেহেতু বহু মানুষ ভালোবাসেন, সোসাইটিতে তাদের কথার গুরুত্ব রয়েছে, তাই আমার মনে হয় যে আমার কথার একটা গুরুত্ব রয়েছে, সততার সঙ্গে যদি কাজটা করি তাহলে তার পাশে প্রচুর মানুষ দাঁড়ান৷ আমরা যে এত জায়গায় গিয়ে রিলিফের কাজ করেছি মানুষ বুঝেছেন যে এটার মধ্যে কোনো ভণিতা নেই৷ কোনো মিথ্যে নেই৷ আমরা সমস্ত অর্থ যা এসেছে সবটা সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়েছি, তার সমস্ত ইউটিলাজেশন, কোথায় কত টাকা দিয়েছি সেইটাও আমরা জানিয়েছি৷ এটা শুধু শিল্পী বলে নয়,মানুষ মানুষের পাশে থাকবে এটাই তো নিয়ম।এটাই আমি ছোট থেকে দেখে এসেছি। আমার বাড়িতে বাবা মা ফ্যামিলির সবাই করেছেন এবং এটা আমার মধ্যে রয়েছে৷ আগামীতেও ঈশ্বর না করুন যদি কারও পাশে দাঁড়াতে হয় আমি নিশ্চয়ই থাকব৷
Hope 21 এও ছিলেন। মিউজিশিয়ানদের জন্য৷ কী মনে হয় এই সময় কীভাবে শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব?
মিউজিক কোনদিন কোন কিছুর জন্য অবসোলিউট হয়ে যেতে পারে না। এটা একটা ফেস, এই ফেসটা কে আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। আমার এটা সবসময় মনে হয় আমরা যারা মিউজিক করি আমাদের মতো লাকি প্রফেশন, মিউজিক যারা ভালবাসেন তাদের মতো লাকি পিপল, যদি তাদের বন্ধু মিউজিক হয়ে উঠতে পারে তাহলে তার থেকে আনন্দের আর কিছু হয়না। কিন্তু আনফরচুনেটলি কোন সরকারই কিন্তু মিউজিককে সেই জায়গাটা দিচ্ছে না। যেমন সিনেমা হল খুলে গেছে, স্কুল আস্তে আস্তে খুলছে সেগুলো এনাউন্সমেন্ট হচ্ছে। আওয়ার প্রফেশন অলওয়েজ কামস লাস্ট, সবার শেষে আসে। কিন্তু মিউজিক ছাড়া মানুষের জীবন চলতে পারে না। তুমি যাই করো দিনের শেষে বাড়ি ফিরে একটা গান হলেও তুমি শুনবে। সুতরাং ইট ইস এ থেরাপি অলসো৷ এটা অত্যন্ত ইম্পরট্যান্ট বিষয়। আমরাও ট্যাক্স দিচ্ছি, জিএসটি দিচ্ছি কিন্তু তারপরেও যেহেতু কোনো সরকারি উদ্যোগ নেই তাই জন্য শিল্পীদের শিল্পীদের পাশে এসে দাঁড়াতে হয়। শিল্পীদের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চেয়ে মিউজিশিয়ানদের দিতে হবে। এ ছাড়া আর কি করা যেতে পারে শিল্পীরা এখন যদি শিল্পীদের পাশে না দাঁড়ান তাহলে আর কবে!
yoga শুরু করেছেন৷ করোনা কি সুস্থ থাকার প্রয়োজনীয়তা বোঝাল?
এটা যে খুব প্ল্যান করে করেছি তা নয়। নীলাঞ্জন ইস ভেরি ইন টু ইয়োগা। ওর সঙ্গে আগে করতাম। তারপর মাঝখানে বন্ধ হয়ে গেছিল। এখন আমি যার কাছে শিখি আমার এক বন্ধু তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেন। বলে যে, তুই ওর কাছে যেতে পারিস টু বি ফিট মেন্টালি এন্ড ফিজিক্যালি বোথ৷ সেই কারণেই যাওয়া এবং টাচ উড ইয়োগা করার পর থেকে আমার প্রচুর কম্প্লিকেশন এইটি পার্শেন্ট মেডিকেশন যা আমার ছিল সব বন্ধ হয়ে গেছে। এটার সাংঘাতিক পজিটিভ ভাইভ আমার মধ্যে কাজ করেছে। আমি সকলকে বলব যাতে তারাও ইয়োগা শুরু করেন।
Iman Chakrabarty production নতুনদের জায়গা দিচ্ছে, নিজের কাজও করছেন৷ এতদিনকার নিয়ম কি ভাঙতে চাইছেন?
না আলাদা করে নিয়ম ভাঙার জন্য কিছুই করিনি৷ এটা আউট অফ মাই প্যাশন। দেখো, আমার নিজের কাজ বেড়ে গেছে। আমার মেন্টাল হেডেক বেড়েছে, ছেলেমেয়েরা আসছে বিশ্বাস করে আমার কাছে, কাজ করতে চাইছে। সুতরাং আমার নিজস্ব গান বাজনার পাশাপাশি এটা একটা হেডেকও কিন্তু আমি খুব প্যাশনেটলি কাজটা করার চেষ্টা করছি আমার এখান থেকে একটা ছেলে মেয়েও উঠে আসে, লোকজন রেকগনাইজ করতে পারে এর থেকে আনন্দের আর কিছু হবে না৷ কারণ আমার কেরিয়ারের শুরুতে আমাকে এই সাপোর্ট কখনো কেউ করেনি। আমার মনে হয়েছে আমার সাধ্যমত আমি নতুনদের জন্য এটুকু করব৷
নিজের গান, প্রোডাকশন, অ্যাকাডেমি তারপরেও আবার এত মানুষের জন্য কাজ এতকিছু কীভাবে সামলান? মালটি টাস্কিং কতটা প্রয়োজন আজকের দিনে?
আমি ছোট্টবেলা থেকে মাল্টিটাস্কার৷ এবং যে কাজটা করি সেটা খুব রিলিজিয়াসলি খুব মন দিয়ে করি তাই খুব একটা অসুবিধা হয় না৷ আমি খুব সময় ভাগ করে নিয়ে কাজ করতে পারি৷ ফ্যামিলিকে টাইম দেওয়া, এখন দুটো জায়গায় থাকতে হচ্ছে, দুটো জায়গা ম্যানেজ করা মানে মাঝে মাঝে আমিই ভাবি কী করে করছি তারপরে মনে হয় যদি মানুষ কোনকিছু করতে চায় সে নিশ্চই পারে , সেই দায়িত্ব থেকেই কাজটা করা৷
সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও লিখন: সায়নী মুখার্জী