ভাদ্র মাসের প্রথম দিন কুমারী মেয়েরা গ্রামের কোন বাড়ীর কুলুঙ্গী পরিষ্কার করে ভাদু প্রতিষ্ঠা করেন। একটি পাত্রে ফুল রেখে ভাদুর বিমূর্ত রূপ কল্পনা করে তারা সমবেত কন্ঠে ভাদু গীত গেয়ে থাকেন। ভাদ্র সংক্রান্তির সাত দিন আগে ভাদুর মূর্তি ঘরে নিয়ে আসা হয়। ভাদ্র সংক্রান্তির আগের রাতে ভাদুর জাগরণ পালিত হয়। এই রাত্রে রঙিন কাপড় বা কাগজের ঘর তৈরী করে এই মূর্তি স্থাপন করে মিষ্টান্ন সাজিয়ে রাখা হয়। এরপর রাত নটা বা দশটা থেকে ভাদু গীত গাওয়া হয়। কুমারী ও বিবাহিত মহিলারা গ্রামের প্রতিটি মঞ্চে গেলে তাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় ও তারা এই সব মঞ্চে ভাদু গীত পরিবেশন করে থাকেন। ভাদ্র সংক্রান্তির সকালে দলবদ্ধভাবে মহিলারা ভাদু মূর্তির বিসর্জন করে থাকেন।
অনেক নাম না জানা উৎসব সংস্কৃতি এ বাংলায় প্রচলিত। ভাদু উৎসব নিয়ে মানভূম অঞ্চলে বেশ কিছু লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে।
পঞ্চকোট রাজপরিবারের নীলমণি সিংদেওর তৃতীয়া কন্যা ভদ্রাবতীর বিয়ে ঠিক হয়৷ কিন্তু হবু স্বামীর অকালমৃত্যু হয়৷ মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ভদ্রাবতী আত্মহত্যা করেন, এই কাহিনী মানভূম অঞ্চলে সর্বাধিক প্রচারিত। বিয়ে করতে আসার সময় ভদ্রাবতীর হবু স্বামী ও তার বরযাত্রী ডাকাতদলের হাতে খুন হলে ভদ্রাবতী চিতার আগুনে প্রাণ বিসর্জন করেন। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওয়েস্ট বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার পুরুলিয়া গ্রন্থে প্রকাশ করা হয় এ কথা৷
ভদ্রাবতীকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নীলমণি সিংদেও ভাদু গানের প্রচলন করেন। বীরভূমে ভদ্রাবতীকে হেতমপুরের রাজার কন্যা বলা হয়৷ কথিত, ভদ্রাবতীর সাথে বিবাহ স্থির হওয়ার পর ইলামবাজারের নিকটে অবস্থিত চৌপারির শালবনে ডাকাতদের আক্রমণে বর্ধমানের রাজপুত্রের মৃত্যু হলে ভদ্রাবতী তার সাথে সহমরণে যান।
আরো পড়ুন
শিবের খুব পছন্দের এই ফুল বছরে ফোটে মাত্র একবার
পঞ্চকোট রাজপরিবারের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাজদরবারে হারমোনিয়াম, পাখোয়াজ, তবলা, সানাই সহযোগে মার্গধর্মী উচ্চ সাহিত্য গুণ নির্ভরএক ধরনের ভাদু গাওয়া হত । এই পরিবারের ধ্রুবেশ্বরলাল সিংদেও, প্রকৃতীশ্বরলাল সিংদেও এবং রাজেন্দ্রনারায়ণ সিংদেও দরবারী ভাদু নামক এই ঘরানার সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু অন্যান্য সকল ভাদু গীত লৌকিক সঙ্গীত হিসেবেই জনপ্রিয় হয়েছে।
সাধারণতঃ গৃহনারীদের জীবনের কাহিনী এই গানগুলির মূল বিষয়। পৌরাণিক ও সামাজিক ভাদু গানগুলি বিভিন্ন পাঁচালির সুরে গীত হয়। সাধারণতঃ রামায়ণ, মহাভারত ও কৃষ্ণ-রাধার প্রেম পৌরাণিক গানগুলির এবং বারোমাস্যার কাহিনী সামাজিক গানগুলির বিষয় হয়ে থাকে।