সামনেই দুর্গাপুজো। মায়ের আগমনে আপামর বাঙালী আবেগে ভেসে যাবে। মাতৃশক্তির আরধানায় মেতে উঠবে সবাই। কিন্তু নিজের ঘরের মায়েদের কি হাল এ সমাজে! পর পর দুবার কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার মাশুল দিতে হল মালদার ইংরেজবাজারের এক মা কে।
পর পর ২ বার কন্যা সন্তান হওয়ায় অলোকার ওপর চরম অত্যাচার শুরু করেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে অলোকা রান্না করছিলেন। ওই সময় অভিযুক্ত স্বামী ও শাশুড়ি অহোলা মণ্ডল চড়াও হন অলোকার ওপর। ঝগড়া-অশান্তির মাঝেই হাঁসুয়া দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপ মারা হয় বলে অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় অলোকাকে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত বধূর নাম অলোকা মণ্ডল। বছর বাইশের অলোকার বাড়ি ইংরেজবাজার থানার বিনপাড়ায়। অভিযুক্ত স্বামী গোপাল মণ্ডল সবজি বিক্রেতা। বছর তিনেক আগে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তারপর আবারও সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন। আবারও কন্যা সন্তানই হয় তাঁর।
একজনের বয়স ১ বছর ৬ মাস, ছোটটির বয়স ৮ মাস। পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, প্রথম বার কন্যা সন্তান হওয়াতে নির্যাতন শুরু হয়। শ্বশুর বাড়ির লোকজন পুত্র সন্তানের আশা করেছিলেন।
প্রায় প্রত্যেক দিনই অশান্তি হত বাড়িতে। প্রতিবেশীরা জানতেন সব কিছু। এক-আধ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আগে। কিন্তু একান্তই পারিবারিক বিবাদ বলে প্রতিবেশীদের পাঠিয়ে দিতেন ওঁরা। আর তারপরই সঙ্গে ঘরের বউরের ওপর অত্যাচার। শরীরের একাধিক জায়গায় কালশিটের দাগ দেখে পরের দিন প্রশ্ন করতেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু এ দিন যেন সব কিছু মাত্রা ছাড়াল। বছর বাইশের মেয়েটার চরম আর্তনাদ শুনে আর স্থির থাকতে পারেননি প্রতিবেশীরা। এক জোট হয়েই চলে গিয়েছিলেন তাঁদের বাড়ি। দরজা খুলতেই সোজা ঢুকে পড়েছিলেন বাড়িতে। কিন্তু তাতে শিউরে ওঠেন তাঁরা। ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছেন মেয়েটা। শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপ। দগদগে ক্ষত দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে। মাটিতে শুয়েই কাতরাচ্ছেন তিনি।
আরো পড়ুন
বধূর পরিবারের এক সদস্য জানাচ্ছেন, “আমরা মেয়েকে নিয়ে এনে রেখেছিলাম বেশ কয়েকদিন। পরে আবার ওরা নিয়ে যায়। অশান্তি হত রোজ জানতাম। মেয়েটা বলত আমাদের। দ্বিতীয় মেয়েটা হওয়ার পর অশান্তি আরও বেড়ে যায়। কিন্তু এমনটা করে ফেলবে বুঝি নি আমরা।” অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। তদন্ত চলছে।
মায়ের পূজার আগে এ ঘটনা নাড়িয়ে দিয়ে গেল আরেকবার। এ সমাজে মেয়েদের অবস্থা এমনই শোচনীয়। অপরাধ একটাই পর পর দুইবার এ পৃথিবীতে মেয়েরা চোখ মেলে তাকিয়েছিল।