Home দেশ হাসির জাদুকর ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে কে না চেনে!  কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামী ভানুকে চেনেন? 

হাসির জাদুকর ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে কে না চেনে!  কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামী ভানুকে চেনেন? 

by banganews

এক সময় অধুনা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিক্রমপুরের স্থানীয় স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে ক্লাস শেষে ম্যাটিনি শো দেখার ধুম পড়ে যেত। আর সেই ধুম  ছাপিয়ে আরও একটা হুড়োহুড়ি  লাগত ছাত্রদের মধ্যে। কারণ টা হল, স্কুল থেকে সিনেমাহলে যাওয়ার পথে নির্দিষ্ট একটি সাইকেলের ক্যারিয়ারে কে বসবে, তা নিয়ে। সেই সাইকেলটা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর বিপ্লবী শহীদ দীনেশ গুপ্তের।  আর প্রতিবারই তাঁর সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসার বরাত জুটত একটি বছর দশেকের ছেলের। সেই ছেলেটি হলেন বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁর আকর্ষণ তৈরি হয় বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের হাত ধরেই। সে সময় দীনেশ গুপ্তের সাথে প্রায়ই চ্যাপলিনের গোল্ড রাস কিংবা মর্ডান টাইমসের মতন নানা ছবি ম্যাটিনি শো দেখতে যেতেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। নয়-দশ বছর বয়সেই আলাপ হয় ভানুর সঙ্গে দীনেশ গুপ্তের। দিনে দিনে দিনেশদা অন্ত প্রাণ হয়ে ওঠেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।  তিনি ঢাকায় দীনেশ গুপ্তের গোপন ইনফর্মারের হিসেবে কাজ করতেন। পরিবর্তে ভানুর দীনেশ দা ভানুকে দিত চকলেট , লজেন্স।

১৯২০ সালের  ২৬ শে আগষ্ট ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় জন্ম গ্রহণ করেন ঢাকার বিক্রমপুরে। পিতৃদত্ত নাম ছিল সাম্যময় বন্দোপাধ্যায়। তাই মাঝে মধ্যেই  তিনি মজা করে বলতেন-‘বাবা আমার নাম রেখেছেন সাম্যময়।আমি একজন সাম্যবাদী। সাম্যের স্বপ্ন আমার নামের সাথেই যুক্ত হয়ে আছে।’

দীনেশ গুপ্তের সাহচর্যে এসেই স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত হয়ে পড়েন ভানু। ঢাকা সদরে দীনেশ গুপ্তের ইনফরমার হিসাবে কাজ করার সময় গাড়োয়ানদের সাথে নিয়মিত চলাফেরা করতে হত তাকে। সেই সুযোগে গাড়োয়ানদের  থেকে শিখে নেন স্থানীয় ‘কুট্টি’ ভাষা। এমনকি তিনি টিফিন কৌটোতে লুকিয়ে রিভালবার পৌঁছে দিতেন বিপ্লবীদের কাছে। নজর রাখতেন ব্রিটিশ পুলিশদের গতিবিধির উপরেও।

দীনেশ গুপ্তের সুবাদেই ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র আর এক বিপ্লবী নক্ষত্র, বিনয় বসুর সঙ্গে আলাপ হয় ভানুর।  এরপর রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে বিনয়-বাদল-দিনেশ হত্যা করেন সিম্পসন সাহেবকে।  ঘটনার তাদেরও মৃত্যু বরণ করতে হয়। এই ঘটনার পর ঢাকার  মিডফোর্ড হাসপাতালে বিপ্লবী বিনয় বসু কর্তৃক কুখ্যাত আইজি প্রিন্স লোম্যান হত্যার ইতিহাস রচনা করেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। দীনেশ গুপ্তের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও আবেগ নিয়ে অনুশীলন দলে নাম লিখিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশও নেন তিনি। এরপর এক ব্রিটিশ ইনফরমার মারা গেলে খুনের অভিযোগে নাম জড়ায় ভানুর। তখন বন্ধু গোপাল মিঞার গাড়ির সিটের তলায় ঢুকে গ্রেফতারি এড়িয়ে পালিয়ে আসেন কলকাতায়। তবে, আমৃত্যু পর্যন্ত ‘দীনেশ দাদার ‘ জন্মদিন নিয়ম করে পালন করতে ভোলেননি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

কলকাতায় এসে ১৯৪৬ সালে আলাপ হয় মাস্টার দা সূর্য সেনের সহযোদ্ধা, বিপ্লবী অনন্ত সিংহের সঙ্গে।  অনন্ত সিংহের বেশ কয়েকটি প্রযোজনায় বিনা পারিশ্রমিকেই কাজ করেছিলেন ভানু বন্দোপাধ্যায়। জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর প্রিয় ছাত্র এবং বিপ্লবী দিনেশ গুপ্তের আদরের ভাই  ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু কৌতুক অভিনেতা ছিলেন না, ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীও। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি ছিল তার অপার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

You may also like

Leave a Reply!