Home দেশ করোনার অকুল পাথারে একমাত্র খড়কুটো ওষুধ

করোনার অকুল পাথারে একমাত্র খড়কুটো ওষুধ

by banganews
করোনা সারাবে, এমন কোনও অব্যর্থ ওষুধ এখনও পাওয়া যায়নি। আবিষ্কার হয়নি কোনও প্রতিষেধকও। ভরসা পুরোনো ওষুধ। তাই কখনও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, কখনও রেমডেসিভির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে। তেমনই মঙ্গলবার আশার আলো তৈরি হল সস্তা এবং সহজলভ্য একটি ওষুধ ডেক্সামেথাসনকে ঘিরে। লো-ডোজের এই স্টেরয়েড ট্রিটেমেন্ট নিয়ে সাফল্যের গান গেয়েছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। স্বাভাবিক ভাবেই সাড়া পড়ে গিয়েছে গোটা দুনিয়ায়। তবে এই ওষুধ সমস্ত করোনা রোগীর ক্ষেত্রেই বিশল্যকরণীর কাজ করবে কি না, তা সময় বলবে। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে গগনচুম্বী প্রত্যাশা তৈরি হলেও, ক্রমশ ফিকে হচ্ছে সেই আশা। বহু দেশেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার।
পুরোনো ওষুধ করোনার ক্ষেত্রে কাজ করবে কি না, তা নিয়ে নানা ধরনের ট্রায়াল চলছে বিশ্ব জুড়ে। যেমন রিকভারি ট্রায়াল, যাকে ভেঙে বলা হচ্ছে র‍্যান্ডমাইজড ইভালুয়েশন অফ কোভিড-১৯ থেরাপি। ব্রিটেনের ১৭৫টি হাসপাতালের ১১,৫০০ রোগীর উপর গবেষণা চালিয়ে মঙ্গলবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এই ওষুধ দেওয়ার পর ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব হয়েছে। অক্সিজেন চলছিল, এমন রোগীর ক্ষেত্রে এক-পঞ্চমাংশ। গবেষণাকারীরা দাবি করেছেন, মহামারীর শুরু থেকে এই ওষুধ ব্যবহার করলে অন্তত পাঁচ হাজার রোগীর প্রাণ বেঁচে যেত ব্রিটেনে। গরিব দেশের ক্ষেত্রে আরও সুবিধা হওয়ার কথা। ওষুধটির দু’লাখ কোর্স মজুত রয়েছে ব্রিটেনের। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশের বিজ্ঞানীদের পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন বলেছেন, ‘সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হলেও আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধ আছে।’
গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০ জন আক্রান্তের মধ্যে ১৯ জন হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই সুস্থ হয়ে যান। যারা ভর্তি হন, তাদের কয়েকজনের অক্সিজেন সাপোর্ট বা মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়। এই হাই-রিস্ক রোগীর ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসনের প্রয়োজন। যে ওষুধ ইতিমধ্যেই আথ্রারাইটিস, অ্যাজমা, ত্বকরোগের ক্ষেত্রে কাজ করেছে।
ডেক্সামেথাসন ব্যবহারে কী লাভ?
গবেষকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক সময় অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলে। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে সাইটোকাইন স্ট্রর্ম। এই অতি সক্রিয়তার জন্য অনেক সময়ই রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন জরুরি, তেমনই তাঁর অতি সক্রিয়তা থেকে ফুসফুসকে বাঁচানোও জরুরি। ডেক্সামেথাসন এখানেই ইমিউনো সাপ্রেসিভ হিসেবে কাজ করে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, ২৮ দিনে ১৭% মৃত্যুহার কমাতে সক্ষম হয়েছে ডেক্সামেথাসন। এর আগে রেমডেসিভির নিয়ে আলোচনা হলেও, তাতে হাসপাতালে কিছুটা কম সময় থাকা ছাড়া বিশেষ লাভ হয়নি। তাছাড়া রেমডেসিভিরের জোগান ঠিকঠাক নয়। তুলনায় ডেক্সামেথাসনের দাম কম, পাওয়া যায় সহজেই। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিয়োলজিস্ট মার্টিন ল্যান্ড্রে বলেন, ’৫০ পাউন্ডের মধ্যে আট জন রোগীর চিকিত্সা এবং একজনের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।’
চিকিত্সকদের দাবিতেই স্পষ্ট, সব রোগীর ক্ষেত্রে অব্যর্থ নয় ডেক্সামেথাসন। তাই আশার আলো না-বলে আপাতত খড়কুটো বলা যেতে পারে এই স্টেরয়েড ট্রিটমেন্টকে।

You may also like

Leave a Reply!